Sunday, February 3, 2019

সুস্থ সন্তান, সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখতে চাইলে এসব জেনে নিন এখনই!

প্রজন্ম

বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুধু নিরাপদ যৌন জীবন না, পরবর্তি প্রজন্মের সুস্থতার জন্যও প্রয়োজন। সবচে বড় কথা কয়েকটি স্বল্প খরচের স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি অনেকগুলো জটিল রোগ নির্ণয় করতে পারবেন, পরবর্তি জটিলতা থেকে নিজে এবং নিজের স্ত্রী/ স্বামী, সন্তানকে মুক্ত রাখতে পারবেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিয়ের আগে যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো করা বেশি জরুরি সেগুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারনা দেয়া হল। লম্বা তালিকা দেখে আৎকে ওঠার কিছু নাই। সব সময়ই তো বেশি বেশি টেস্ট দেয়ার জন্য ডাক্তারকে গালমন্দ করেন। এবার নিজে থেকে, পরিবারের ভালোর জন্য কয়েকটা টেস্ট করান।

ইনফার্টিলিটি টেস্ট (Infertility Test):
বিয়ের পর আপনি সন্তান নিতে চান বা না চান, কিন্তু জেনে রাখতে হবে, আপনারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই শারীরিকভাবে সন্তান জন্মদানে সক্ষম কিনা। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা আছে। পুরুষদের জন্য সিমেন এনালাইসিস, মহিলাদের জন্য পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম, বিভিন্ন হরমোন লেভেল কাউন্ট, থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট ইত্যাদি।

ব্লাড ডিজঅর্ডার টেস্ট (Blood-disorder Test):
থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়াসহ কয়েকটি রক্তের রোগ নির্নয়ের জন্য এটি খুবই জরুরি। যেমন হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রো ফোরেসিস টেস্ট। চাচাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে হলে কোন অবস্থাতেই হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রো ফোরেসিস পরীক্ষার রিপোর্ট না দেখে সন্তান নেয়া উচিত না। জেনেশুনে একটি অসুস্থ বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনার অধিকার আপনার নেই।

এসটিডি টেস্ট (STD Test):
সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি যৌনবাহিত রোগ নির্নয়ের জন্য এসব পরীক্ষা করা হয়। এন্টিবায়োটিক খেয়ে আগে জীবাণুমুক্ত হন, তারপর বিয়ের তারিখ ঠিক করেন।

এইচ আইভি(HIV), হেপাটাইটিস বি(HBV) এবং হেপাটাইটিস সি(HCV) ভাইরাসের এন্টিবডি টেস্ট:
আমরা টের না পেলেও নিরব ঘাতকের মত ছড়িয়ে পড়ছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসগুলো। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মহিলা এইডস রুগি এইচআইভি ভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছে তাদের বিদেশ ফেরত স্বামীর মাধ্যমে। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের সন্তানও এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত হয় মায়ের কাছ থেকে।

টর্চ স্ক্রিনিং (TORCH Screening):
টক্সোপ্লাজমা, রুবেলা, সিএমভি, হারপেস ভাইরাস এন্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে গর্ভধারনের আগেই বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি আছে নাকি জেনে নেয়া যায়। এরকম জন্মগত ত্রুটি নিয়ে বাচ্চা জন্ম নেয়ার পর বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে, তাই এই স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্বও বেশি। সরকার অবশ্য এর মধ্যেই বিনামুল্যে ৯-১৪ বছরের বাচ্চাদের বিনামুল্যে রুবেলা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছে।

জেনেটিক টেস্ট (Genetic Test):
ব্রেস্ট, কোলন বা ফুসফুস ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদি বংশগত রোগ এই ধরনের টেস্টের মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়।

মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা( Mental Health Assessment):
আমরা মানসিক রোগগুলো নিয়ে বরাবরই উদাসিন। অথচ বিয়ের পর কেবলমাত্র মানসিক রোগের কারনেই অনেকের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

বয়স ও ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় (Age determination and blood grouping & Rh typing):
কম বয়সে (১৮ বছর) বিয়ে হলে যেমন সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা ইত্যাদি রোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে, তেমনি বেশি বয়সে (৩৫ বছর) বিয়ে হলে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাছাড়া স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য ৫ বছরের বেশি না হওয়াই ভাল। এতে শারীরিক এবং মানসিক, দুই ধরনের স্বাস্থ্যই ভাল থাকে।অন্যদিকে পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের মায়ের গর্ভে নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের বাচ্চা বেড়ে উঠলে, জন্মের কিছুক্ষনের মধ্যেই বাচ্চা প্রাণঘাতী সমস্যায় পরতে পারে। একটির বেশি বাচ্চা নিলে এ রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।

এছাড়াও বিয়ের আগে রুটিন রক্ত, প্রস্রাব পরীক্ষা, বুকের এক্সরে, ইসিজি, সিরাম ক্রিয়েটিনিন করে নেয়া উচিত।
এক সময় ভ্যাক্সিন ছিল না, এখন অনেকগুলো ভ্যাক্সিন সরকারিভাবেই দেয়া হয়। এক সময় রক্ত নেয়ার আগে স্ক্রিনিং টেস্ট ছিল না, এখন স্ক্রিনিং ক্রস ম্যাচিং ছাড়া রক্ত দেয়ার কথা চিন্তাও করা যায় না।

আজকে আমাদের উপরের কথাগুলো হাস্যকর, বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। এক সময় দেখা যাবে ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ "কবুল" বলছে না।

অপেক্ষায় থাকলাম।
© জাহিদুর রহমান।

ভালো থাকুন | School of Awareness

No comments:

Post a Comment